পরিষ্কারক দ্রব্য হিসেবে সাবানের ব্যবহার অনেক প্রাচীন। দৈনন্দিন ব্যবহার্য এই দ্রব্যটির মধ্যে পঁচা সাবান উল্লেখযোগ্য। তবে পঁচা সাবান নামটি মাথায় আসলে এটাও মনে হয় যে সাবান আবার পচা হয় কীভাবে, অথবা এই সাবান কী আসলেই পচা! কমবেশি এই প্রশ্ন প্রায় সকলের মনেই আসে।
তবে এই পঁচা সাবান পচা কিনা জানতে গেলে দেখা যায় উভয়ের মাঝে খুবই সুক্ষ্ম একটা পার্থ্যক্য আছে, আর তা হলো চন্দ্রবিন্দুতে। পঁচা এবং পচা দুটি শব্দই আলাদা অর্থবোধক শব্দ।
পঁচা সাবান মানে কি নষ্ট সাবান?
"বাংলা শব্দের পৌরাণিক উৎস" নামক বইয়ে ড. মোহাম্মদ আমিন বলেছেন, বাংলায় ক্রিয়াবিশেষ্যে 'পচা' অর্থ হলো গলে যাওয়া, বিকৃত হওয়া, দুর্গন্ধযুক্ত হওয়া ইত্যাদি। আর বিশেষ্যে হয় বিকৃত, খারাপ,নষ্ট প্রভৃতি। নষ্ট, বিকৃত, খারাপ প্রভৃতি অর্থে 'পচা' লেখা হয়ে থাকে। নষ্ট বা খারাপ জিনিশে চন্দ্রবিন্দু থাকে না। যেমন: পচা মাছে ভারি দুর্গন্ধ। পচা জিনিস খেলে পেট খারাপ হয়। পচা লোক পচা কথা বলে ইত্যাদি।
পচা মানে নষ্ট, কিন্তু পঁচা মানে পঞ্চ বা পাঁচ। সংস্কৃত পঞ্চ থেকে উদ্ভূত পাঁচ আঞ্চলিক ভাষায় কোথাও কোথাও 'পঁচা'য় পরিণত হয়েছে। কথ্য এমনকি প্রমিত কথাতেও পাঁচ অর্থে পঁচা শব্দের ব্যবহার আছে। পঞ্চগড়কে একসময় বলা হতো পঁচাগড় (পঞ্চগড়)। উদাহরণ হিসেবে আরো বলা যায়, পঁচা দিন গেল, তবু লোকটি আমার এলে না। পঁচা বছর আগের কথা।
তেমনিভাবে ১নং আলমের পঁচা সাবান মানে আলমের বিকৃত বা নষ্ট সাবান নয়; পঞ্চ সাবান বা পঁচা মিয়ার সাবান ইত্যাদি বোঝানো হয়।
এছাড়া পঁচা শব্দটা কিন্তু সংখ্যাপাঠেও আছে। যেমন পঁচানব্বই মানে নষ্টনব্বই নয়,পঁচাশি মানে নষ্টআশি নয়! তাহলে পঁচাত্তরও কী পচা?
সাবানের উৎপত্তি হলো কিভাবে?
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে সাবান ব্যবহারের ইতিহাস প্রায় পাঁচ হাজার বছরের বেশি পুরোনো।পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে সাবানজাতীয় বস্তুর ব্যবহারের প্রথম প্রমাণ মেলে খ্রিষ্টপূর্ব ২৮০০ বছর আগে প্রাচীন ব্যাবিলনে। সে সময় মাটির পাত্রে সাবানের মতো বস্তু তৈরি ও ব্যবহার করা হতো।
বিভিন্ন লেখাপত্র থেকে জানা যায় যে ভারতীয় উপমহাদেশে নিজেদের ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে লিভার ব্রাদার্স প্রথম সাবান পরিচিত করে তোলে ১৮৯৭ সালের দিকে। এরপর জমশেদ টাটা ১৯১৮ সালের দিকে কেরালায় নিজেদের সাবান কারখানা নির্মাণ করেন এবং এটিই প্রথম ভারতের স্থানীয় সাবান কারখানা। ১৯৩০ সালের প্রথম দিকে এই কারখানার নিজস্ব ব্র্যান্ডের সাবান বাজারে আসে। এ সবই মাত্র সোয়া ২০০ বছর আগের কথা।
প্রথম পঁচা সাবান
বাংলাদেশের প্রথম পঁচা সাবান তৈরি করে আলম সোপ ফ্যাক্টরী। আলম সোফ ফ্যাক্টরি ও আলম গ্রুপের মালিক শরীফুল আলম বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি। সেই বহুল পরিচিত পঁচা আলম খ্যাত আলমের ১ নং পঁচা সাবানই বাঙালীর নিত্যকার ব্যবহার্য পঁচা সাবানের নাম ছড়িয়ে দেয়। একই সাবান অনেক কোম্পানি থেকে ভিন্ন নামে বের হলেও তবে পঁচা সাবান নামটাই কিন্তু রয়ে গেছে মুখে মুখে।
আশির দশকের শেষদিকে বিটিভিতে কাপড় কাচা ইউরেকা বক মার্কা সাবানের বিজ্ঞাপন দিতো স্লাইড শো হিসেবে। তবে সেই সময় থেকে নব্বই দশকের দীর্ঘ সময় কাপড় ধোয়ার সাবান হিসেবে সারা দেশে বেশি চলতো আলমের ১ নম্বর পঁচা সাবান। বর্তমানে আধুনিক শিল্পপ্রযুক্তি ও একচেটিয়া মার্কেটিংয়ের কল্যাণে এই পঁচা সাবানের বিকল্প ডিশওয়াশ,লিকুইড ওয়াশ বা আধুনিক বার সাবানের প্রচলন শুরু হয়ে গেছে। তবে দেশীয় শিল্প হিসেবে এই পঁচা সাবানের ব্যবহারও কিন্তু এখনো টিকে আছে মার্কেটিংবিহীন ম্লান পরিসরে।