অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম ছুটিটা কিভাবে কাটাবো।দুমাসের লম্বা ছুটি।মাথায় কোন প্ল্যানই ধরছিলোনা।বেশ কয়েকজন বন্ধুবান্ধবকে বলেও যখন কোন সায় পাচ্ছিলাম না তখন হুট করেই বেরিয়ে পড়লাম আমরা তিন দলছুট কিশোর।উদ্দ্যেশ্য সীতাকুন্ড।এই জায়গাটায় ঘুরে দেখার মতো অনেক কিছুই আছে সেটা উইকিপিডিয়ার বদৌলতে জেনেছি।এই সীতাকুন্ড নামটার পেছনেরও একটা গল্প আছে।প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ ও ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, প্রাচীন কালে এখানে মহামুণি ভার্গব বসবাস করতেন। অযোদ্ধার রাজা দশরথের পুত্র রামচন্দ্র তাঁর বনবাসের সময় এখানে এসেছিলেন। মহামুণি ভার্গব তাঁরা আসবেন জানতে পেরে তাঁদের স্নানের জন্য তিনটি কুণ্ড সৃষ্টি করেন এবং রামচন্দ্রের এখানে ভ্রমণ কালে তাঁর স্ত্রী সীতা এই কুণ্ডে স্নান করেন। এই কারণেই এখানকার নাম 'সীতাকুণ্ড' বলে অনেকের ধারণা। এই সীতাকুন্ড সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি তীর্থস্থান।আর এর কেন্দ্রবিন্দু হলো চন্দ্রনাথ শৃঙ্গ।চন্দ্রনাথ শৃঙ্গ প্রায় ১০২০ফুট বা ৩১০ মিটার উঁচু।এটিই চট্টগ্রাম জেলার সর্বোচ্চ স্থান।এই সর্বোচ্চ চুড়াতেই অবস্থিত বিখ্যাত চন্দ্রনাথ মন্দির,যেখানে তীর্থকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর বিরাট মেলা হয়।মেলা না হোক,এই পাহাড়টা জয় করার ইচ্ছা নিবারণ করতে পারলাম না।
খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেই তল্পিতল্পা গুছিয়ে ট্রেন ধরলাম।বৃহস্পতিবার ট্রেনের ভীড় আর প্রচন্ড গরমে যখন সীতাকুন্ড স্টেশনে এসে নামলাম তখন মনে হচ্ছিল হাফ ছেড়ে বেঁচেছি! এখান থেকে হালকা নাস্তা সেরে প্রয়োজনীয় পানি ও হালকা খাবার কিনে নিলাম।আমাদের দেখে স্থানীয় দোকানদার জিজ্ঞেস করলো কোথায় যাচ্ছি,যখন শুনলো চন্দ্রনাথ পাহাড় তার চোখ তো প্রায় কপালে উঠে গেল!
আসলেই প্রচন্ড গরম পড়ছিল।পরে জেনেছিলাম আমরা যেদিন গিয়েছিলাম সেদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজমান ছিল।
হেঁটেই রওনা দিলাম পাহাড় জয়ের উদ্দ্যেশ্যে।কোন যানবাহন ব্যবহার করবোনা এটা প্রতিজ্ঞা করেই হণ্টন মিশন শুরু।যেহেতু এখানে আমরা আগে কখনো আসিনি তাই একজন গাইড প্রয়োজন ছিল।আর সেই গাইড হিসেবে আমরা নিয়েছি গুগল ম্যাপ!বাকি পথ আবিষ্কার করব নিজেরাই।গুগল ম্যাপ আমাদের একটু ঘুরপথে পথ দেখালো।তাই স্টেশন থেকে দক্ষিনে এক কিলোমিটারের মত হেঁটে পৌছলাম সীতাকুন্ড ইকোপার্কের প্রথম গেইট।এখান থেকে আরো বেশ খানিকটা পথ হেঁটে পাহাড়ের পাদদেশ,এখান থেকেই ইকোপার্কের শুরু।২০টাকা করে টিকেট নিয়ে ভেতরে ঢুকতে হলো।ইকোপার্কের ভেতর দিয়ে পাহাড়ে ওঠার ইটবাঁধা রাস্তা আছে।দু পাশে চেনা অচেনা হাজার রকমের গাছ,চেনা অচেনা পাখির ডাক আর কানে তালা লাগানো ঝিঁঝিঁ পোকাদের কলরব।মনেহচ্ছে লক্ষ লক্ষ পোকা আন্দোলন করে তাদের জগতে ঢুকতে বাঁধা দিচ্ছে আমাদের।
পাহাড়ি রাস্তা এঁকেবেঁকে কখনো খাঁড়া কখনো ঢালু হয়ে এগিয়ে চলছে।প্রথমে স্বাচ্ছন্দেই উঠছিলাম।কিন্তু প্রায় ৩০মিটার ওঠার পর একেকজনের অবস্থা কাহিল।খাঁড়া পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে ওঠা যে কতটা কষ্টকর সেটা না উঠে বলা যাবেনা।পা যেন আর চলতে চায়না।তবু আমরা বিশ্রাম না নিয়ে ধীরে ধীরে এগোতে লাগলাম।বিশ্রাম নিতে বসলে আবার আলস্যে পেয়ে বসবে।প্রথমে ঝিঁঝিঁর ডাকে কানে তালা লেগে যাচ্ছিল পরে তা সয়ে গেছে।পরবর্তীতে এই ডাকটাই ছিল আমাদের পুরো পথের সঙ্গী।পথের দুপাশে ইকোপার্কের বিভিন্ন রোডসাইনে লেখা মনিষীদের বাণী কিংবা কবিতাংশ পড়তে পড়তে পথটা পাড়ি দেয়া যায়।প্রায় অনেকখানি ওঠার পর হঠাৎ একটা সাইনের লেখা পড়ে থমকে দাঁড়ালাম।ওটায় লেখা
- "সুপ্তধারা ঘুমিয়ে আছে,
জেঁগে ওঠে বর্ষাকালে"।
হ্যাঁ,সুপ্তধারা হলো এখানকার একটি ঝর্ণা।আরো বেশ কয়েকটি ঝর্ণা আছে এই অঞ্চলে।ঝরণার পাশ দিয়ে যাব আর ঝরণা না দেখলে কী হয়?
কিন্তু এর জন্য নামতে হবে ৩০০ ফুটের মত খাঁড়া সিঁড়ি বেয়ে!সিঁড়ি টপকে নামতে শুরু করলাম।প্রায় অর্ধেক নামতেই পা অবশ হয়ে এলো।দেখলাম আমাদের আগে আরো একদল টুরিস্ট নেমেছিল তারা উঠে আসছে।জিজ্ঞেস করে যা জানলাম তাতে হতাশ হলাম।ওরা বলল বাসার টেপ ছাড়লে নাকি এরচে ভালো পানি পড়ে।কী আর করা,অসময়ে আসলে যা হয়।
তারপরও উৎসাহ দিল আসছেন যেহেতু দেখে আসুন।
আমরা আবার নামতে শুরু করলাম।অনেক পথ নামার পর আরো একদলের সাথে দেখা,তারা সবাই অনেক ক্লান্ত হয়ে সিঁড়ির উপরেই বসে আছে।আমাদের নামতে নিষেধ করে বললো কষ্ট করে নেমে কোন লাভ হবেনা।আমাদের যাওয়ার ইচ্ছাও ক্ষান্ত দিয়ে শুরু করলাম উপরে ওঠা।তখনই বুঝলাম আসল ব্যপারটা।নিচে নামা যতটা সহজ,খাঁড়া সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠা তারচেয়েও কঠিন!যখন উপরে উঠে এলাম তখন আমাদের শক্তি বলতে কিছুই অবশিষ্ঠ নেই।উপরে বসে পানি খেলাম।এ যেন পানি নয়,অমৃত!মিনিট দুয়েক জিরিয়ে নিয়েই হাঁটা শুরু।
চারদিকে সবুজে সবুজে চোখ জুড়িয়ে যায়।এই সবুজের সৌন্দর্যের মোহে পড়ে যাই আরো আঁধা ঘন্টাখানেক হেঁটে উপরে ওঠার পর সামনেই পড়লো একটা মাউন্ট ভিউ টাওয়ার।পাশেই একটা সাইনে লেখা 'সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে আপনি এখন ১০০০ ফুট উপরে অবস্থান করছেন'! দৌড়ে গিয়ে উঠে পড়লাম টাওয়ারে,তখনই চারদিকের সেই মনমাতানো সবুজ চোখে পড়ে,দূরে দেখা যায় কুয়াশাচ্ছন্ন সমুদ্র।ক্লান্তিহীন চেয়ে থাকতে ইচ্ছে করবে শুধু।আমাদের গন্তব্য আরো দূরে তাই চেয়ে থাকার ইচ্ছেটাকে এখানেই রেহায় দিলাম।আবার একটানা হাঁটতে শুরু।বয়ে আনা পানি প্রায় শেষ হয়ে এল।পথে বেশ কয়েকটি ট্যুরিস্ট দল আর পিকনিক পার্টির সাথে দেখা হয়েছে।সবাই অনেক ক্লান্ত,ঘামে ভিজে একেকজনের অবস্থা কিম্ভুতকিমাকার।আরো চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আবার থমকে দাঁড়ালাম!আরেকটি ঝর্ণা,এটার নাম সহস্রধারা।রোডসাইনে লেখা
-"অনন্তকাল ধরে ব্যথা ঝরিয়ে যাচ্ছে সহস্রধারা।'
মনটা নেচে উঠলো,এতক্ষণের ক্লান্তি তাহলে ঝর্ণার পানিতে ডুবিয়ে দেয়া যাবে।কিন্তু এর জন্যেও নামতে হবে আরো ৫০০ ফুটের মতো খাঁড়া সিড়ি বেয়ে।উঠে আসা পথের প্রায় অর্ধেক!এবার আর কোন বাঁধা মানলাম না,সিড়ি টপকে নামতে শুরু করলাম।অনেক্ষণ ধরে নামার পর যখন আর পা চলছিল না তখন মনে হল নিচে নেমে এসেছি।
কিন্তু একি! অনেক উপর থেকে অল্প একটু পানি পাথর গড়িয়ে নিচে পড়ছে।নিচের জমে থাকা পানিগুলোও ময়লা হয়ে গেছে।আসলেই এটা ঝর্ণা দেখার সময় নয়। একেবারেই হতাশ হলাম।কত আশা রেখেছিলাম নেমেই পানিতে ঝাপ দেবো,তা আর হলোনা।একটু শক্তি সঞ্চয় করে উঠতে শুরু করলাম আবার।খাঁড়া সিড়ি বেয়ে ওঠাটা যে কতটা কষ্টকর সেটা আগেও বলেছি।পা টেনে টেনে ওঠার সময় মাঝপথে সিড়িতেই বসে পড়লাম তিনজন।অবশিষ্ঠ পানিটুকু ভাগ করে গলা ভিজালাম।এতক্ষণে খেয়াল হলো পানি শেষ!এই প্রথম পানির গুরত্বটা বুঝতে পারলাম!
বসে থেকে লাভ নেই,অনেক কষ্টে যখন উপরে উঠে এলাম তখন মনে হচ্ছিল এখানেই শুয়ে পড়ি।
পাহাড়ে স্থানীয়দের ছোট ছোট দোকান পড়ে পথে।সমতলের চেয়ে দ্বিগুণ দামে পানি কিনতে হলো।হালকা নাস্তা সেরে মনটা শক্ত করে আবার পা চালালাম।সামনের রোডসাইন দেখে বুঝলাম ইকোপার্কের সমাপ্তি এখানেই।শুধু তাই না,'সামনে বিপজ্জনক ও দুর্গম এলাকা' লেখা পথনির্দেশক!
তবে ওটা আমাদের মনে কোন দাগই কাটলোনা।আরেকটু এগিয়ে যেতেই বিমানবাহিনীর একটা রেঞ্জ অফিস চোখে পড়লো।দুজন লোককেও দেখালাম বসে আছে।বিমানবাহিনীরই কেউ হবে।তারা আমাদের কোথায় যাচ্ছি জিজ্ঞেস করলে বললাম চন্দ্রনাথ পাহাড়।ওরা বলল আমরা যদি এই অঞ্চলে নতুন হই তবে এই পথে না যেতে।এখানে নাকি দিনে দুপুরে ডাকাতি এবং মানুষ খুন পর্যন্ত হয়!! নতুন দেখে মজা করছে ভেবে আমরা তবু এগিয়ে গেলাম।সেই বিপজ্জ্বনক দুর্গম পথ ধরেই!পেছন থেকে লোকগুলো আরো কয়েকবার নিষেধ করছিলো না যেতে।সেটা আর কানে নেইনি।
এই পথে ঝিঁ ঝিঁ পোকাদের ডাকটা আরো গভীর আরো জোরালো।যেন কোন আগাম বিপদের আভাস দিচ্ছে।এছাড়া বাকি সব একদম নিরব আর উপরে খাঁ খাঁ রোদ।বেশ দূরে অনেক জ্বলে যাওয়া পাহাড় দেখা যায়।কে যেন বিড়বিড় করে বলল,'দাবানল'।
এই থমথমে অবস্থাটা কাটানোর জন্য হেঁড়ে গলায় গান ধরলাম,
হ্যাঁ, চন্দ্রনাথের মন্দির তখনও উপর থেকে জ্বলজ্বল করে চেয়ে আছে আমাদের দিকে।হঠাৎ গান থামিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম,
-কে ও?
ধীরে ধীরে পা ফেলে চড়াই বেয়ে উপরে উঠে আসছে,আমাদের দিকেই!
সাহস করে আরেকটু এগোলাম।
তেমন কেউ না,মাথায় বোঝাওয়ালা একজন কাঠুরে।আমাদের দিকে তীক্ষ্ম চোখে দেখে পাশ কাটিয়ে গেল।
অর্ধেক থেকে আবার গেয়ে উঠলাম গানটা।হয়তো আটকে থাকা নিঃশ্বাসটাও বেরিয়ে গেছে।গুগল ম্যাপে পথটা সোজা আর খুব কাছে দেখালেও আমাদের যেতে হচ্ছে অনেক ঘুরপথে।
দূর থেকে মনেহয় ঐতো দেখা যাচ্ছে মন্দিরটা,আরেকটু গেলেই পাবো।ওখানে গেলে দেখা যায় আরো পথ পেরোতে হবে।অনেকটা মরিচিকার মত।
আমাদের দলের বাকি দুজন পিছিয়ে পড়েছে।একটু পরপর বসে বিশ্রাম নিতে হচ্ছে পথে।অবশ হয়ে আসা পা'টা টেনে টেনে নিয়ে যাচ্ছি।পথের পাশ থেকে তিনটা লাঠি কুঁড়িয়ে নিলাম তিনজনে।লাঠিতে ভাল সাপোর্ট হয়।দুপাশের খাঁড়া উচু পাহাড়ের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা পথটা আসলেই অনেক দুর্গম।এই দুর্গম পথটা পাড়ি দিয়েই পৌছে গেলাম অবশেষে মন্দিরের সিড়ির গোড়ায়।সাথেই একটা বড় বটগাছ আর হঠাৎ বয়ে আসা লিলুয়া বাতাস!প্রকৃতি এই গাছের নিচে বসতে বলবেই।তবে না বসে আবারো খাঁড়া সিড়ি বেয়ে উপরে ওঠা শুরু করলাম।চন্দ্রনাথ এখন হাতের মুঠোয়,কিন্তু সব ক্লান্তি যেন এখানেই পেয়ে বসেছে।সরু সিড়ির দুপাশে পাহাড়ি খাদ,একটু টাল সামলাতে না পারলেই পড়ে যাবো শ'খানেক ফুট নিচে।ক্লান্তিতে মনে হচ্ছিল যেকোন সময়ই পড়ে যাচ্ছি।টেনে হিঁচড়ে যখন মন্দিরে উঠে এলাম মনে হলো হঠাৎ অনেক জোর পেয়েছি।আর সেই জোর দিয়ে জোর গলাতেই দিলাম একটা চিৎকার,সেটা প্রতিধ্বনিত হয়ে পাহাড়ে পাহাড়ে জানান দিচ্ছিল আমাদের উপস্থিতি।জোরটা এখানেই শেষ।প্রচন্ড গরম,রাজ্যের ক্লান্তি আর পিপাসা নিয়ে শুয়ে পড়লাম মন্দিরের বারান্দাতেই।এর মধ্যে আবারও খাওয়ার পানি শেষ।এই প্রতিকুল পরিবেশে টিকে থাকার জন্য পানি কতটা গুরুত্বপুর্ণ তা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম।হঠাৎ মন্দিরের পেছনে একটা দোকান দেখেতে পেয়ে প্রায় তিনহাত লাফিয়ে উঠলাম।শেষে তিনগুণ দাম দিয়ে পানি কিনতে হল।তখন এই পানির সাথে পৃথিবীর আর কোন কিছুর স্বাদের তুলনা হয়না।সাথে ব্যাকপ্যাক আছে বলে খুব বেশি পানি আনাও যায়নি,নিজেদের নিয়ে হাটতেও কষ্ট হচ্ছে যেখানে।
দূর দুরান্তের কুয়াশাচ্ছন্ন পাহাড়গুলো মনে কৌতুহল জাগায়,ওই পাহাড়ের পেছনে কী আছে,কতদুর গেছে এই পথ!দুরের আবছা সমুদ্রের বাষ্পিভবন আর মেঘের নিচে ছোট্ট সীতাকুন্ড শহরটা দেখা যায়।স্থানীয় দোকানদার ছেলেটা যখন শুনলো আমরা ঐ পুব দিকের পথ দিয়ে এসেছি ওর চোখতো প্রায় চানাবড়া থেকে ডালবড়া।কারণ জানতে চাইলে বলল,
-"ওটা নিষিদ্ধ পথ!আপনারা পথের সাইনবোর্ড দেখেননি?'
সাইনবোর্ড আমরা দেখেছি ঠিকই তবে আমলে নেইনি।ছেলেটার ভাবভঙ্গি দেখে পথটার ভয়াবহতা টের পেলাম।মন্দিরের পাশেই পুলিশ ক্যাম্প।
ছেলেটা বলল,
-'এখন যদি পুলিশ টের পায় আপনারা ওই নিষিদ্ধ পথ দিয়ে এসেছেন,তবে রেহায় নেই।আইন অমান্য করার জন্য নাকি শাস্তিও হয়ে যেতে পারে।'
চারদিকে মেঘ-কুয়াশা সবুজের নিস্তব্ধতার মোহে আটকে পড়া দলছুট কিশোরদের এবার টনক নড়লো।তখন মধ্যদুপুর,কাঠফাটা রোদ মাথায় নিয়ে নামতে ইচ্ছে করছিল না।মন্দিরের পুরোহিতের সাথে কথা বললাম কিছুক্ষণ,দেখতে ভয়ংকর হলেও মজার মানুষ।আর একটা ব্যপার হলো পাহাড়ের এত উপরে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে।বিদ্যুতিক পিলার আর মন্দিরের এক ডানাওয়ালা পাখাটা দেখলেই বোঝা যায়।পরে জানলাম বাকিদুটো ডানা ঝড়ে ভেঙে গেছে।এবার নামার পালা।দুটো পথ আছে, বাঁ পাশের পথ দিয়েই নামতে শুরু করলাম।এই পথটাও অনেক ভয়ংকর।খাড়া সিড়ি নেমে গেছে একেবেঁকে।একটু এদিক হলেই এসপার কি ওসপার।একটু পরপরই হাঁপিয়ে উঠছিলাম তাই পথে পথে বিশ্রাম নিয়ে চলতে হচ্ছিল।পথে আরো কয়েকটি মন্দির পড়ে।চন্দ্রনাথের নিচে বামেই বিরূপাক্ষ মন্দির।অনেক পথ নেমে আসলাম মন্দিরগুলো দেখতে দেখতে।যত নিচে নামছি তাদের সংখ্যাও বাড়ছে,সাথে বিভিন্ন আশ্রম,ধর্মশালা ও শশ্মানও দেখা যায়।অবশেষে হেঁটে এসে পৌছলাম সীতাকুন্ড রেলস্টেশন।যেখান থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম।ম্যাপ দেখলে দেখা যায় আমাদের সার্ভাইভালটা একটি বৃত্ত পুর্ণ করে।অনেক ধকল গেছে এর মাঝে।হোটেলে লাঞ্চ সেরে স্টেশনের বেঞ্চিতে বসে একটু চাঙ্গা হয়ে বিকেলের ট্রেনে বাড়ি ফেরার পথ ধরলাম।মনের ভেতর ধুকপুক করছিল,কত কী যেন ফেলে চলে যাচ্ছি।পাহাড়ের উপর চন্দ্রনাথ মন্দিরের চুড়াটা তখনো জ্বলজ্বল করছিল।বিদায় চন্দ্রনাথ।
এবার তবে অন্য কোথাও,অন্য কোন এডভেঞ্চার নিয়ে উপস্থিত হবো।দলছুট যেহেতু হয়েছি বাড়িতে আটকে থাকবো কেন?